ইমাম খাইর, সিবিএন
কক্সবাজার পৌরসভার ড্রেন নির্মাণ কাজে সমন্বয়হীনতা ও অনিয়মের অভিযোগ ওঠেছে। কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলছে এলাকাবাসী। ব্যবহার করা হচ্ছে দুই-তিন নম্বর ইট, বালি ও কংকর। কাউন্সিলর বলছেন, কাজ শুরুর আগে তাকে জানানো হয় নি। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের দাবি, ওয়ার্ক অর্ডার মেনে কাজ করা হচ্ছে।
বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে কক্সবাজার সদর থানা সড়ক থেকে খুরুশকুল রাস্তা পর্যন্ত এমজিএসপির আওতায় ড্রেন ও রাস্তা নির্মাণ প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করছে পৌরসভা। আরজু কনস্ট্রাকশন নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি পায়।
গত প্রায় ১০ দিন ধরে পৌরসভা ৪ নং ওয়ার্ডের টেকপাড়া এলাকায় ড্রেনের কাজ চলছে।
অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ড্রেনের কাজ চললেও অসন্তুষ্টি দেখা দিয়েছে স্থানীয়দের মাঝে। কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন আছে অনেকের।
স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে অবগত না করে ড্রেনের কাজ শুরু করায় অসন্তুষ্টির দানা আরো শক্তিশালী হয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, ড্রেনের কাজে ১ নম্বর ইট, বালি, কংকর দেয়ার কথা থাকলেও তাতে দুর্নীতি করছে ঠিকাদার। তিন নম্বর কংকর হাতেনাতে ধরা পড়ায় উল্টো ফেরত দিয়েছে এলাকাবাসী।
এদিকে, রবিবার (১৫ মার্চ) টেকপাড়ার চলমান ড্রেনের কাজ বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেন স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর দিদারুল ইসলাম রুবেল। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে স্থানীয় বাসিন্দারা।
খোদ প্রকাশ্য জনগণের সামনে পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী টিটন দাস ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ ওয়ার্ড কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেন।
সবার মুখে মুখে প্রচার হয়, নির্মাণ সামগ্রী সরবরাহ দিতে না পেরে কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন কাউন্সিলর। তাতে আরো ক্ষুব্দ হয়ে ওঠে এলাকার এলাকার সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে তারা।
খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে পৌঁছেন ওয়ার্ড কাউন্সিলর দিদারুল ইসলাম রুবেল।
এসময় তিনি বলেন, ওয়ার্ক এসিস্ট্যান্ট ছাড়া ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সাথে আঁতাত করে নিজের মতো করে কাজ চালিয়ে দিচ্ছেন পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী টিটন দাস।
ওয়ার্ক অর্ডারে ড্রেনের কাজে ৬ ইঞ্চি বালু দেয়ার কথা থাকলেও মানা হচ্ছে না। সঠিকভাবে কাজ করার নির্দেশ প্রদান করি।
তিনি বলেন, প্রথম সিসি ঢালাইয়ের দিন আমাকে অবগত করা হয় নি। অনেকবার স্পটে গেলেও ওয়ার্ক এসিস্ট্যান্ট পাওয়া যায় নি।
ওয়ার্ক অর্ডার অনুযায়ী কাজ হচ্ছে কিনা, তা বুঝে নেয়ার জন্য আমার পক্ষ থেকে একজন ইঞ্জিনিয়ার দেয়ার কথা বলছিলাম।
কিন্তু পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আমার প্রস্তাবের মূল্যায়ন করে নি। নিজেদের মতো কাজ চালাচ্ছেন।
কাউন্সিলর রুবেল ঘটনাস্থলে পৌঁছার পূর্বে পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী টিটন দাস স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ করে বলেন, ওয়ার্ড কাউন্সিলর দিদারুল ইসলাম রুবেল অতর্কিতভাবে কাজ বন্ধ রাখতে নির্দেশ দিয়ে চলে যান। কারণ জানি না।
তিনি বলেন, ড্রেনের লে-আউট তৈরি করার জন্য এক কোমর পানিতে নেমে কাজ করেছি। ৭ মাসের মধ্যে কাজ শেষ করতে হবে। আগামী বর্ষা মৌসুমের আগে দ্রুত শেষ করতে না পারলে মানুষ কষ্ট পাবে। কাজ বন্ধ থাকলে এলাকাবাসী জিম্মি হয়ে পড়বে।
টিটন দাস চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেন, শতভাগ গুণগত মান ঠিক রেখে কাজ করছি। কড়াই গন্ডায় বুঝিয়ে দিতে পারব। কাজে কোনো অনিয়ম হচ্ছে না।
জানতে চাইলে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আরজু কনস্ট্রাকশনের প্রকল্প কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, ওয়ার্ক অর্ডার মেনেই ড্রেনের কাজ করা হচ্ছে। কিছু কংকর দুই নম্বর পড়ার অভিযোগ ওঠায় সেগুলো ফেরত দেওয়া হয়েছে।
ড্রেনে ৬ ফিট বালি ব্যবহারের কথা থাকলেও কেন মানা হচ্ছে না? জানতে চাইলে বলেন, সব স্থানে ৬ ফিট বালি ব্যবহার বাধ্যতামূলক নয়। যেখানে প্রয়োজন সেখানেই ব্যবহার করতে হবে।
টেকপাড়া অংশে নির্মানাধীন ড্রেনের তলা শক্ত। তাই সেখানে বালি ব্যবহার প্রয়োজন নেই বলে মন্তব্য করেন প্রকল্প কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ। তার জন্য কোন বিল করবেন না বলেও জানান তিনি।
বর্ষা মৌসুমে জলমগ্ন থাকতো পুরো টেকপাড়া। ড্রেনের পচা পানি বাসাবাড়িতে ঢুকে পড়তো। দুর্ভোগে থাকতে হতো পুরো এলাকাবাসীকে। দীর্ঘদিনের দাবী অনুযায়ী টেকপাড়ার গুরুত্বপূর্ণ ড্রেনের কাজ শুরু করায় পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান, কাউন্সিলর দিদারুল ইসলাম রুবেলসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
তাদের দাবী, কাজে যাতে দুর্নীতি না হয়।